মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত এম মিরাজ হোসেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি ২০১৭ সাল থেকে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। এ পরিচয়ের বাইরেও তিনি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং একজন লেখক ও সমাজসেবী। তিনি তার দক্ষতার এবং বহুমুখী প্রতিভার ছাপ রেখে চলেছেন প্রতিটির ক্ষেত্রে।
প্রারম্ভিক জীবন : ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি রোববার তিনি ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। পদ্মার জল ও মাটির স্পর্শে বেড়ে ওঠা উদ্যমী এবং প্রখর মেধাসম্পন্ন এই মানুষটি বিসিআইসি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি জমান ভারতের মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটিতে। সফলতার সঙ্গে স্নাতক শেষ করার পর তিনি ইংল্যান্ডের ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে বিবি প্রোগ্রামে স্কলারশিপ অর্জন করেন। এখানেও তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রাখার মাধ্যমে সফলতার সঙ্গে বিবিএ শেষ করেন। ২০০৪ সালে তিনি সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে এমবিএ শেষ করেন। যদিও তিনি লন্ডনে সারাজীবনের জন্য বসবাস করতে পারতেন কিন্তু দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসার কারণে তিনি মাতৃভূমির কোলে ফিরে আসেন।
সংক্ষিপ্ত আকারে তার পেশাদারি জীবন : ২০০৪ সালে দেশে চলে আসার পর তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে MP Sweaters Limited-এ যোগদান করেন। তার দূরদর্শী নির্দেশনা এবং দক্ষতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েক বছর নিরবচ্ছিন্ন মুনাফা অর্জন করে। তিনি ২০১৫ সালে কেয়া গ্রম্নপে কন্টোলার অব অডিটর হিসেবে যোগদান করেন। তিনি তার সততা এবং কাজের প্রতি একাগ্রতার মাধ্যমে খুব দ্রুত নিজেকে একজন দক্ষ এবং নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে প্রমাণ করেন। যার ফলস্বরূপ ২০১৭ সালে তিনি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক পদে পদন্নোতি পান। তিনি কোম্পানির ব্যবসা ও বিপণন কৌশলগুলোর বিকাশ ও সম্পাদন, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ কোম্পানির মুনাফা অর্জনের কৌশলগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন। তার পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড বিগত ৫ বছর ধরে রেকর্ড ব্রেকিং সাফল্য অর্জন করেছে এবং এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। পেশাগত ব্যাপক ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি জাতিসংঘসহ বেশকিছু দেশি ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি কানাডায় জাতিসংঘের প্রজেক্টে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতিসংঘের Youth Vision প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কিছু সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
পুরস্কার এবং সম্মাননা : এম মিরাজ হোসেন বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস তাকে বর্ষসেরা মেধাবি ছাত্রের খেতাব প্রদান করে। এছাড়াও ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয় তাকে CIP (Corporate Important Person) ঘোষণা করে। এখানে উলেস্নখ্য যে, সে সময়ে সর্বকনিষ্ঠ CIP হওয়ার মর্যাদা তিনি লাভ করেন। ২০২১ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের সহযোগী Youth Vision তারুণ্যের উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে পদক প্রদান করে। এছাড়াও অন্যান্য দেশি-বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে পেয়েছেন বিভিন্ন পদক এবং সম্মাননা। সামাজিক অবদান : এম মিরাজ হোসেন অনেক বছর ধরেই বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম যেমন রিলিফ প্রোগ্রাম, দরিদ্র এবং এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমসহ আরো অনেক সামাজিক কাজে নিজেকে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত করেছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক পস্ন্যাটফর্মে তিনি সক্রিয় আছেন।
আগ্রহ এবং স্পৃহা : এম মিরাজ হোসেন সাহিত্যের প্রতি বেশ অনুরক্ত। সাহিত্যের প্রতি এ ভালোবাসা থেকে তিনি রচনা করেছেন কবিতা, গান, উপন্যাস এবং ছোট গল্প। তার লেখক প্রতিভার পাশাপাশি আরও একটি গুণ হচ্ছে- তিনি খুব ভালো গান করেন। বাংলাদেশের কিছু কালজয়ী গান যেমন- ‘আমি একা বড় একা, বলছি তোমায় কানে কানে, আবার এলো যে সন্ধ্যা’সহ অর্ধ ডজন গান তিনি গেয়েছেন নতুন করে। যেগুলো বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে এবং দর্শকের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। গানের পাশাপাশি তিনি প্রযোজনা করেছেন শর্টফিল্ম। ২০২০ সালে প্রচারিত হয় তার প্রযোজিত প্রথম শর্টফিল্ম “রিশাদ ও কানের দুল”। তিনি এই শর্টফিল্মের কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকারও বটে। সর্বশেষ এ বছরের জুন মাসে প্রচারিত হয় তার প্রযোজিত ২য় শর্টফিল্ম ‘ওয়েডিং স্টোরি’। অবসর সময়ে তিনি বই পড়েন এবং একটু সুযোগ পেলেই ঘুরে আসেন দেশ-বিদেশ থেকে। তার মতে বই পড়া আর ভ্রমণ তাকে কাজের প্রতি উদ্দীপ্ত করে তুলতে সহায়তা করে। পরিশেষে বলা যায়, বহুগুণে গুণান্বিত এই মানুষটি কর্মক্ষেত্রে সফলতার পাশাপাশি অর্জন করেছে মানুষের অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া এবং ভালোবাসা।
তথ্যসূত্রঃ যায়যায়দিন